🌺🌺🌺করাল বদনা কালী 🌺🌺🌺 শাস্ত্র বলছে আদ‍্যাশক্তি মহামায়া করাল বদনা।করাল শব্দের অর্থ দুর্ধষ বা ভয়ঙ্করী। মার মুখ মন্ডল অতীব ভয়ঙ্করী।মহাকালরূপে তিনি সমস্ত বিশ্বকে গ্রাস করেন। আবার মহাকালকেও গ্রাস করেন বলিয়া তিনি 'করাল-বদনা'। ইহার একটু বিস্তৃত ব্যাখ্যার প্রয়ােজন।কালের কোলে সকলকেই লয় হইতে হয়।'মহাকাল' সৃষ্টি হইতে চিরকাল ধরিয়া সমস্ত কলন অর্থাৎ গ্রাস করেন। সেইজন্য তিনি জগৎ-সংহারক মহাকাল নামে পরিচিত।মহাপ্রলয়কালে সেই মহাকালকেও তিনি গ্রাস করেন অর্থাৎ নিজ অঙ্গে লয় করিয়া লন।সেইজন্য তিনি করাল-বদনা কালী। জগতের নিত্য সৃষ্টি ও পুষ্টির ন্যায় সংহার কার্য্যও তাহাতে সম্পন্ন হইতেছে, তাহার করাল বদনে তাহাই সততঃ প্রকটিত হইতেছে। সংসারের জীবসমূহের মুখই স্কুলভাবে তাহার করালবদনের মহিমা সব্ব্দা প্রকাশ করিতেছে। উদ্ভিজ্জ, স্বেদজ, অণ্ডজ ও জরায়ুজ রূপে একে অন্যের ভক্ষক হইয়া সংসারে সব্বদা তাহার লয়-লীলা অক্ষুগ্ন রাখিয়াছে। আমরাও আজন্ম কত কি যে আমাদের এই ক্ষুদ্রায়তন মুখমণ্ডল দিয়াই গ্রাস করিতেছি, তাহার পরিমাণ আমাদের দেহ-পরিমাণের তুলনায় যে কতগুণ তাহা ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়। কিন্তু সেটা কি কখন ভাবিয়া দেখি? করাল-বদন আবার তাঁহার কঠোরতার নিদর্শনও বটে। ইহা ঘোরসমর নিষ্ঠুরতা যাহা দেবাসুরের যুদ্ধের স্বরূপ। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়। দেবতা ও অসুর বা দানব উভয়েই মায়ের সন্তান। দেবতাদের রক্ষার জন্য (শাস্তপ্রকৃতি সজ্জন সাধুদিগের রক্ষার জন্য) অসুরদিগকে মা সাময়িকভাবে ভীষণ তাড়না বা বিনাশ-প্রায় করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহারা তাে মরে নাই। তাহারা যে আবার মাতৃশক্তিপুষ্ট বা দৈবীশক্তিসম্পন্ন অসুর-গুরুর মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্রবলে পুনঃ জীবিত হইয়া যেন মৃতকল্পভাবে রিপুরূপে অভিনব মানবদেহ গ্রহণপূর্ব্বক মানব-ইন্দ্রিয়ে পঞ্চভূতাত্মক হইয়া রহিয়াছে। তাই ত মানব দেবতা ও দানব উভয় প্রকৃতিরই প্রতীক স্বরূপ। মানবের ভিতর নিয়তই সেই দেবাসুরের ভীষণ সমর বিরাজ করিতেছে। ভক্তের হৃদয়ে সেই দানবীকোলাহল অনুভূত হইলেই মা অবিলম্বে তথায় অবতীর্ণ হন। সুতরাং 'করালবদনা' শুধু কঠোরতার নিদর্শন নয়, আশীর্বাদের নিদর্শনও বটে। . . . .